রাজ নন্দন কাহিনী
রাজ নন্দন-এর যাত্রা যেভাবে শুরু হলো
ওয়াহিদুর রহমান
প্রায় দুই যুগ আগে বাংলাদেশে আমরাই প্রথম প্রিকাস্টিং RCC বিল্ডিং ডেকোরেশনের বিষয়টি বৃহৎ ও বানিজ্যিক আকারে শুরু করি। এর আগে ছোট ছোট কিছু কাজ চললেও, আমাদের পথচলা শুরু ডেকোরেটিভ RCC পিলার দিয়ে। তখন থেকেই আমরা ডিজাইন-ডাইস বা ছাঁচ তৈরী করি, তারপর সেই ছাঁচে রড-সিমেন্ট, স্টিল নেট, সিলেট স্যান্ড এবং কংক্রিট এর ঢালাই দিয়ে তৈরী করি আমাদের রাজসিক ডিজাইন। এরপর এই অর্নামেন্টসগুলো সেট করা হয় পিলার বা বিল্ডিং এ।
RCC ডেকোরেশনের সাথে সাথেই আমরা জিপসাম মেটারিয়ালেও ব্যপকভাবে কাজ শুরু করি। কারুকার্যময় পিলার ছাড়াও তৈরী করি সিলিং রোজ, কর্নিশ, উইন্ডো/ ডোর ডেকোরেশন, নৈচা, বড় ফুলের টব, ওয়াটার ফাউন্টেন এবং এরকম আরও অনেক কিছুই।
বিল্ডিং ডেকোরেশনটা আসলে শৌখিন মানুষরাই করতে চান আর এই ধরনের সুক্ষ্য কারুকাজগুলো মুলতঃ প্রাচীন গ্রিস, রোম বা ভারতীয় মুঘল রাজপ্রাসাদে-ই বেশী চর্চা হয়েছ। ফলে এইসব রাজকীয় ডিজাইন নিয়ে কাজ করার কারণেই আমরা “রাজ নন্দন” নামটিকে বেছে নিয়েছিলাম।
আমাদের এই পথচলাটা কি সহজ ছিল? না, তা ছিলোনা। সেই দুই যুগ আগে আমরা ঢাকা কেন্দ্রিক এই প্রতিষ্ঠানটি শুরু করি। তখন প্রিকাস্টিং ডেকোরেশনের বিষয়টি আমাদের দেশে খুব পরিচিত ছিলোনা। তবে, অনেকেই আগ্রহবোধ করতেন, ফলে আমাদের প্রচুর প্রশ্নের উত্তরও দিতে হতো। তারপর ধীরে ধীরে যখন বেশ কিছু কমপ্লিট ডেকোরেশনের কাজ আমরা করে ফেললাম, একটা সময়, কাজগুলো দেখে, অনেক প্রশ্নের উত্তর-ই তারা নিজেই পেয়ে যেতে থাকেন—মানে, আমাদের কাজের উপর একধরনের আস্থা তৈরী হতে থাকে। মানুষের এই আস্থা অর্জন করেই আমরা রাজ নন্দনের গুড উইল-টি তৈরী করতে পেরেছি।
সিলেটে একটি প্রতিষ্ঠান করার বিষয়টি যে আগে থেকেই পরিকল্পনায় ছিলো তা নয়। এক বন্ধুর অনুরোধে প্রথম যখন সিলেটে বেড়াতে যাই, লক্ষ্য করি সিলেটের যে কোনো বাড়ী ঘরেই, কিছু না কিছু শৌখিনতার চিহ্ন রয়েছে—এ থেকেই আমি উদ্বুদ্ধ হই সিলেটে একটি প্রতিষ্ঠান তৈরী করার। আমার প্রেরণাটি বোধহয় ভুল ছিলনা, কারণ সিলেট কেন্দ্রিক প্রতিষ্ঠানটি শুরু করার সাথে সাথেই ব্যপক সাড়া পেতে শুরু করি আমরা। ফলে, পরবর্তীতে আমাদের প্রধান অফিসটিও সিলেটেই স্থানান্তর করা হয়।
বিগত বছরগুলোতে আমরা বাংলাদেশের বিবিধ জেলা থেকেই অর্ডার পেতে থাকি। আমি মনে করি ডিজাইনড পিলার ও জিপসাম ডেকোরেশনে এখন মানুষ অনেক বেশী আগ্রহী। যার ফলেই আমরা “রাজ নন্দন যশোর” এর উদ্যোগ নিয়েছিলাম এবং সেখানেও অভুতপূর্ব সাড়া পেয়েছি।
কেউ কেউ ভাবতে পারেন এভাবে বাড়ীর ডেকোরেশন করাটা বোধহয় অনেক খরচের ব্যাপার। আসলে তা মোটেই সত্যি নয়, বাড়ী তৈরীর বাজেটটি সামান্য কিছু বাড়িয়ে নিলেই ডেকোরেশনের কাজটি সম্পন্ন করা যেতে পারে। যেহেতু অনেকেই নিজেদের থাকার ছোট্ট বাড়ীটিকেও সাজিয়ে তুলতে চান, তাই স্বল্প খরচে একটি টেকসই ও নান্দনিক ডিজাইন তৈরীর বিষয়টিকে সব সময়-ই আমাদের মাথায় রাখতে হয়।
ডিজাইনের প্রক্রিয়াটি একটি শৈল্পিক প্রক্রিয়া। আমাদের ডিজাইন করা প্রোডাক্টগুলোর সার্ভিস পাবার পর মানুষের সন্তুষ্টি-ই আমাকে সবচেয়ে বেশী আনন্দ দেয়। এই সন্তষ্টিকে টিকিয়ে রাখতে পারাটাই আমাদের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি বলে আমি মনে করি।
যেভাবে রাজ নন্দন যাত্রায় সামিল হলাম
আশরাফ হোসেন, লাভলু
দেশের বাইরে গিয়ে দেখেছি অতীতের রোমান বা গ্রীক নকশায় সুসজ্জিত প্রাসাদের সারি, ভাস্কর্য, ইয়ার্ড ডেকোরেশন, আর ভেবেছি এতো সুন্দর করে ঘর-বাড়ি/বাড়ির আঙ্গিনা সাজানো কি সম্ভব? দেশে ফিরে কিছু একটা করতে হবে ভাবতে ভাবতে অনেকটা সময় পার হয়ে গেলো, এমন সময় আমার বন্ধু ওয়াহেদুর রহমান (খোকন) এর সাথে দেখা করতে সিলেট গেলাম, সেখানে তার দক্ষ কারিগরদের হাতের কাজ দেখে আমি মুগ্ধ ! আমাদের দেশের মানুষও যে এই সৃজনশীলতার সাথে জড়িত থাকতে পারে, তখন সেটা ছিলো আমার ভাবনার বাইরে।
ইতোমধ্যে, কখন যে একটি মাস পার হয়ে গেছে সিলেটে, বুঝতেও পারিনি; খুব ভালো লেগেছিলো কাছ থেকে দেখা তাদের ডিজাইন এবং কন্সট্রাকশনের কাজগুলো। তারপর সেই ভালোলাগা ও আমার বন্ধুর আন্তরিকতাকে পূঁজি করেই যশোরে ফিরে “রাজ নন্দন যশোর” নামে একটি শাখা উদ্বোধনের উদ্যোগ নেই। আমাদের দক্ষিণবঙ্গে, সুরুচির যে কদর আছে তার পরিচয় পেতে আমাদের খুব বেশী সময় লাগেনি। বৃহত্তর খুলনা, যশোর, কেশবপুর, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ, মাগুরা, বগুড়া থেকে শুরু করে নানা যায়গা থেকেই আমরা একতলা বা বহুতল বাড়ির এক্সটেরিয়র/ ইন্টেরিয়র ডেকোরেশনের ছোট বড় অজস্র অর্ডার পেতে শুরু করি।
কাজের অভিজ্ঞতায় অনুভব করেছি যে নিজের থাকার যায়গা বা বাসস্থানটিকে সুন্দর করে সাজানোটা কেবল শৌখিনতা নয়, বরং মানুষের অন্তরের চাহিদা। সেই চাহিদাকে কিছুটা হলেও যদি মিটিয়ে থাকি, তাই-ই আমাদের সফলতা।
“রাজ নন্দন যশোর” এ বিগত ৫ বৎসর ধরে দক্ষ কারিগর নিয়ে পথচলায় RCC ও জিপসাম মেটারিয়ালে ব্যপকভাবে কাজ করার অভিজ্ঞতা আমাদের হয়েছে। RCC (রড, সিমেন্ট, বালু) দ্বারা কারুকার্যময় পিলার, উইন্ডো-ডোর ডেকোরেশন, নৈচা, রেলিং, ওয়াটার ফাউন্টেন, ফুলের টব ছাড়াও জিপসামের সিলিং রোজ, কার্ণিশ, কর্ণার, ঝুলন্ত ফলস সিলিং সহ নানাবিধ ডেকোরেশন তৈরী, ডেলিভারী ও সেটিং করে আসছি আমরা। ব্যবহৃত উপাদানগুলোর নিয়মিত মান নিরীক্ষা এবং তৈরী স্ট্রাকচারগুলোর ব্যবহার উপযোগীতা পরীক্ষা করাটা আমাদের রুটিন অয়ার্ক।
RCC ও জিপসাম ডিজাইন জগতে “রাজ নন্দন” আজ সফল ও অগ্রগামী দৃষ্টান্ত হয়ে প্রতিষ্ঠিত এই বাংলাদেশে এবং তা সম্ভব হয়েছে সততা, দক্ষতা, পেশাদারীত্ব ও মানসম্মত পণ্য সরবরাহের মাধ্যমে মানুষের আস্থা ও ভালোবাসা অর্জনের মাধ্যমেই। তাই, সেই আস্থাটুকু ধরে রাখতে আমরা সদা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।